ফুঁ

যখন যা-ই ইচ্ছা আল্লাহ তা করতে পারেন। তিনি একবার ইচ্ছা করলেন পৃথিবীতে নতুন জাতি আনবেন। মানব জাতি। পশুপাখির মতো বুদ্ধিহীন নয়। ফেরেশতাদের মতো পাপহীনও নয়। বরং, জিনদের মত স্বাধীন ইচ্ছাওয়ালা। অনেক বুদ্ধিওয়ালা। আল্লাহর অনেক আদরের জাতি হবে তারা। খুব যত্ন করে, আশা নিয়ে বানাবেন তাদের। জিনজাতির পরিবর্তে এদেরকেই একসময় পৃথিবীতে বাসিন্দা করে পাঠাবেন। যথারীতি আল্লাহ তাঁর পরিকল্পনা ফেরেশতাদেরকে জানালেন। পরিকল্পনা শুনে ফেরেশতারা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। অবাকও হলেন। এই গেলো জিনদের এতো রক্তারক্তি। ইবাদত করার চেয়ে খুনাখুনি নিয়েই এদের ব্যস্ততা ছিল বেশি। এখন মানুষ নামের এই নতুন বাসিন্দা এসে আবার রক্তারক্তি শুরু করবে? ইবাদত যে কতটুকু করবে কে জানে! আমরা ফেরেশতারা তো আল্লাহ, আপনার ইবাদত করতে গিয়ে কোনো কমতি করছি না। আর মারামারি, রক্তারক্তির তো প্রশ্নই আসে না। বিস্ময় প্রকাশ করলেন আল্লাহর সামনে।

আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও বুদ্ধি সবার ধারণার বাইরে। ফেরেশতারা জানতেন না যে, এই মানবজাতি হয়ত কিছু পচা কাজ করবে। কিন্তু এদের মধ্য থেকে আসবেন অনেক নবী-রসূল। আসবেন অনেক আলিম-আবিদ, সত্যবাদী। এমনকি এদের অনেকে আল্লাহর জন্য নিজের জীবনও দিয়ে দিবে।

যা-ই হোক, বেশী কথা না বাড়ালেন না আল্লাহ। শুধু বললেন, “আমি যা জানি, তোমরা তো তা জানো না”। নিজেদের কমতি বুঝতে পারলেন ফেরেশতারা। তা-ই তো, আল্লাহর পরিকল্পনার হিকমত বুঝা শুধু তাঁদের নয়, কারো পক্ষেই সহজ নয়। বরং আল্লাহ যা চান তা-ই হোক।

আজ শুক্রবার। অপেক্ষার সেই দিন। আর কিছুক্ষণ পরই আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে বানাবেন।।[1] অনেক অনেক সুন্দর করে বানাবেন।[2] আল্লাহ কিছু বানাতে চাইলে শুধু বলেন, “হও”। আর অমনি তা বানানো হয়ে যায়। আজও কি আল্লাহ তাই করবেন? “মানুষ তৈরি হও” শুধু এই কথাটা বলবেন? আর একটা জ্যান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে?

না, মানুষ আর অন্য সৃষ্টি এক নয়। আল্লাহ তাকে নিজে হাতে বানাবেন।[3] যত্ন নিয়ে বানাবেন। শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি আনা হয়েছে আল্লাহর সামনে। এই গন্ধওয়ালা মাটি থেকে আল্লাহ নিজ হাতেই বানালেন দুনিয়ার প্রথম মানব।[4] চোখ-কান ওয়ালা, হাত-পা ওয়ালা একটা সুন্দর কিছু তৈরি হলো। কিন্তু নড়াচড়া করছে না যে এখনো?

করবে কিভাবে? এখনো যে ভিতরে আত্না ভরা হয়নি। এখনো যে তা মাটির মূর্তি। একটা সময় মানুষটার ভিতরে ফুঁকে দেওয়া হলো রূহ বা আত্না।[5] অমনি মাটির তৈরি মানুষটি জীবিত হয়ে উঠলেন। মানুষটার নাম রাখা হলো ‘আদম’। কি সুন্দর হয়েছেন দেখতে! যেমন লম্বা তাঁর দেহ, তেমনি ঘন আর লম্বা তাঁর চুল।[6] রূহ ফুঁকে দেওয়ার সাথে সাথেই আদম (আ) এর হাঁচি আসল। হাঁচি দিয়েই তিনি আপনা-আপনি বলে উঠলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর”। জবাবে আল্লাহ বললেন, “হে আদম, আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর রহম করুন।[7] তুমি যাও, ঐ যে ফেরেশতারা বসে রয়েছেন, তাঁদের গিয়ে সালাম দাও। আর মনোযোগ দিয়ে শুনবে তাঁরা তোমায় কি জবাব দেয়? কারণ, এটাই হবে তোমার সন্তানদের দেখা-সাক্ষাতের আদব।” আদম (আ) ফেরেশতাদের কাছে গিয়ে বললেন, “আস-সালামু আলাইকুম, আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। ফেরেশতারা খুশি হলেন আদমের সুন্দর কথা শুনে। একটু বাড়িয়ে জবাব দিলেন, “আস-সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আপনার উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক”।[8]

মানুষকে শুধু দেখতে সুন্দর নয়, বুদ্ধিতেও সুন্দর হতে হবে। জানতে হবে অনেক কিছু। আদম (আ) কে তাই আল্লাহ সকল কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন। বাদ গেলো না কোন মানুষ, জন্তু-জানোয়ার। এমনকি আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, চাঁদ-সূর্য ও গ্রহ-তারার নামও।[9] এবার ডাকলেন সকল ফেরেশতাদের। নিয়ে আসা হলো হরেক রকম জিনিস তাঁদের সামনে। “বল এবার এগুলোর নাম?”

ফেরেশতারা দেখলেন এগুলোর ব্যাপারে তাঁদের কোন ধারণাই নেই। “শুধুতো আল্লাহর ইবাদতই করেছি। আল্লাহর তৈরি জিনিসগুলো নিয়ে তো এতো ভাবিনি। কার নাম কি, কার কাজ কি, আমরা কিভাবে জানবো আর কিভাবে বলব!” তাই শুধু এটুক বললেন “আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না। শুধু যতটুকু আমাদের শিখিয়েছেন সেটুক ছাড়া।”[10]

এবার আদম (আ) এর পালা। “হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও তো এসবের নাম।” আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান থেকে আদম (আ) সবগুলোরই নাম বলে দিলেন। আল্লাহর বান্দা আদম (আ) কে ফেরেশতারা এমনিতেই ভালোবাসতেন। তবে আদম (আ) এর জ্ঞান দেখে তাঁদের চোখ খোলে গেলো। বোঝলেন, জ্ঞান যার, সম্মান তার। আল্লাহও চাইলেন সকল ফেরেশতা আদম (আ) কে সিজদাহ করে সম্মান দেখাক। আল্লাহর কথায় সকল ফেরেশতারাই আদম (আ) কে সিজদাহ করলেন। তবে একজন ছাড়া!

কে সেই একজন?!

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

[1] সহীহ মুসলিম (ইফা): ১৮৪৯

[2] সূরা আত-তীন ৯৫: ৪

[3] সূরা সা’দ ৩৮: ৭৫

[4] সূরা আল-হিজির ১৫: ২৬-২৭

[5] সূরা আল-হিজির ১৫: ২৯

[6] তাফসীর ইবনু কাসীর ৭: ২৩

[7] সূনান তিরমিজী (ইফা): ৩৩৬৮

[8] সহীহ বুখারী (ইফা): ৫৭৯৪

[9] তাফসীর ইবনু কাসীর ২: ৩১

[10] সূরা আল-বাকারাহ ২: ৩২