খেলা

নাম তার আযাযীল। আরেক নাম ইবলিস। আল্লাহর ইবাদতে ইবলিস ছিল ফেরেশতাদের থেকেও এগিয়ে। ছিল তার অনেক জ্ঞান। তাই জিনদের সাথে তার চলাফেরা ছিল না। ছিল জমিনের ফেরেশতাদের সাথে। আর কি পায় নি সে?! শুকরিয়া আদায়কারী আল্লাহ। ইবলিসের ইবাদতের বদলা তাকে গোনে-গোনেই দিয়েছিলেন। বানিয়েছিলেন তাকে দুনিয়া আর প্রথম আসমানের রাজা। ছিল তার চারটি ডানা। জমিনে আর আকাশে উড়ে বেড়াতো ইচ্ছা মত। আল্লাহ তাকে আরো সম্মান দিলেন জান্নাতের দারোয়ান বানিয়ে।

এতো কিছু  পেয়ে ইবলিসের ভিতর এক রোগ বাসা বাঁধল। রোগটার নাম ‘অহংকার’।[1] অহংকার এক ভয়ংকর পাপ। চুপিচুপি আমাদের সবার মাঝেই এই পাপ বাসা বাঁধতে পারে। ২ বন্ধুর একজন দেখতে হয়ত সুন্দর, আরেকজন দেখতে হয়ত অতটা ভালো না। এখন সুন্দর বন্ধুটি যদি ভাবে, “আমার বন্ধু দেখতে কি বিশ্রী…” এটাই অহংকার। অথবা, একজন লোক কিছু ভালো কাজ করে ভাবল, “অনেক ভালো কাজ হয়েছে। আমার মত ভালো কাজ কয়জন-ই বা করে?” এটাই সেই সর্বনাশা অহংকার রোগ।! কেউ যদি অহংকার সত্যিই করতে পারে তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি সকল গুণের অধিকারী।

যা-ই হোক, ইবলিসের অহংকারের প্রকাশ ঘটল ‘সিজদাহর ঘটনা’র মাধ্যমে। “ও ফেরেশতারা আর তোমাদের সাথী ‘জিন ইবলিস’, সবাই আমার ‘আদম’ কে সম্মান কর। তার সামনে সিজদাহ কর।” সকল ফেরেশতা খুশিমনে আদম (আ) কে সিজদাহ করলেন। কিন্তু ইবলিস আল্লাহর কথা এই প্রথম বারের মত অমান্য করল। সে সিজদাহ করল না। আল্লাহর ক্রোধ যেনো ফেটে পড়ল!

ইবলিসকে বললেন, “আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সিজদাহ করতে বারণ করল?”

ইবলিস জবাব দেয়, “আমি এমন নই যে, একজন মানুষকে সিজদাহ করব। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে বানিয়েছেন। আর একে বানিয়েছেন কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি দিয়ে। আর তাই, তার চেয়ে আমার সম্মান বেশি।”

অহংকার অন্ধ বানিয়ে দেয়। ইবলিসও তখন অন্ধ। দেখতে পাচ্ছিল না যে, আদম আর জিন সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কাউকে বানান তিনি মাটি থেকে আর কাউকে আগুন থেকে। এতে আদম আর ইবলিসের কোনই হাত নেই। আর তাই অহংকারী শয়তানটা কে বললেন,

“এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। তুই এখান থেকে বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।”

“তাহলে আল্লাহ, আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার সময় দিন।”

“তোকে কেয়ামত পর্যন্ত সময় দেয়া হলো।”

“হে আমার রব, আজকে এই আদমের কারণে আমি অপমানিত হলাম। এই মানব জাতির কারণে আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিলেন। এর বদলা আমি তাদের থেকেই নিব। তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা চমক দেখিয়ে বোকা বানাবো। দুনিয়ায় চিরকাল থাকার লোভ জাগাবো। তাদের সবাইকে খারাপ পথে নিয়ে যাবো। তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনার এত এত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে তারা? না, আমি তা হতে দিব না। বরং, আপনি তাদের পাবেন পাপী হিসেবে। কারণ, পচা পচা কাজগুলো আমি অদের সামনে তুলে ধরব মিষ্টি করে।”

“বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত হয়ে, অপমানিত হয়ে। আমার মূমিন বান্দাদের উপর তোর কোন ক্ষমতাই নেই। তবে যে কেউ তোর পথে চলবে, নিশ্চয় আমি তোদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করব। আর যারা আমাকেই ভালোবাসবে, আমাকেই ভয় পাবে তাদের আমি জান্নাতে ফিরিয়ে আনব। জান্নাতের বাগান আর ঝর্ণাগুলোতে তারা ঘুরে বেড়াবে। শুধু শান্তি আর আনন্দই থাকবে সেখানে।”[2]

বের হয়ে গেলো ইবলিস শয়তান তার অহংকার আর প্রতিশোধের আগুন নিয়ে। সে ভুল করল দুইটি। প্রথম ভুল: সে অহংকার করল। ভাবল, আগুন মাটির চেয়ে সেরা। কারণ, আগুন মাটিকে পুরিয়ে দিতে পারে। সে এটা বুঝলা না যে, আল্লাহ আদম (আ) কে নিজ হাতে যত্ন করে সৃষ্টি করেছেন। সবার থেকে আলাদা করে। আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সিজদাহ করা শিরক। কিন্তু আদমের দিকে সিজদাহ দিতে তো আল্লাহই আদেশ করেছিলেন। তাহলে তা সে কিভাবে অমান্য করল!

দ্বিতীয় ভুল: সে ভুল করে ক্ষমা চাইল না। বরং একগুয়েমি করল। মাফ না চেয়ে চাইল সময়। অথচ, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ছিলেনই।[3]

ইবলিস খুব বড় ভুলই করল। আর সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো ‘খেলা’। মানুষ বনাম ইবলিস শয়তানের খেলা।

………………………………………………………………………………………………………………

[1] সূরা আল-বাকারাহ ২: ৩৪

[2] সূরা আল-আ’রাফ ৭: ১১-১৮; সূরা আল-হিজির ১৫: ২৯-৪৬

[3] তাফসীর ইবনু কাসীর ৭: ২৩